বেটিং সাইটের প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন তামিম-আশরাফুল, সাকিব কেন নন?
নিজস্ব প্রতিবেদক
-
প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বেটিং সাইটের প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন তামিম-আশরাফুল, সাকিব কেন নন?
ক্রীড়া প্রতিবেদক
বোলিং একশনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফেরার সবুজ সংকেত পেয়েই নতুন এক বিতর্কে জড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। ভারতীয় একটি বেটিং সাইটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন তিনি। যেহেতু বিসিবির কোড অব কন্ডাক্ট আর দেশের আইন অনুযায়ী জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত সকল কাজই নিষিদ্ধ, সে কারণে সাকিবের এই ঘটনা জন্ম দিয়েছে নতুন করে বিতর্কের।
সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার যিনি কিনা সরাসরি যুক্ত হয়েছেন বেটিং বা জুয়ার সাইটের সাথে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সাকিবই প্রথম ক্রিকেটার নন যিনি কিনা প্রস্তাব পেয়েছেন বেটিং সাইটের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হওয়ার। সাকিবের আগে আরও বেশ ক জন ক্রিকেটারকে বেটিং সাইটের কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছিল তাদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হওয়ার।
সাকিবের আগে একই বেটিং সাইটের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ আশরাফুলকে। সাকিব বেটিং সাইটের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব উপেক্ষা করতে না পারলেও তামিম-আশরাফুল রাজি হননি তাদের প্রস্তাবে। শুধু তামিম-আশরাফুলই, লোভনীয় এমন প্রস্তাব এসেছিল জাতীয় দলের অন্তত ৭ ক্রিকেটারের কাছে। তাদের সকলেই প্রস্তাব উপেক্ষা করেছিলেন।
সাকিবকে ওয়ান এক্স বেট কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দেয়ার আগে তারা যোগাযোগ করেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের সাথে। সে সময় তামিমকে সেই বেটিং সাইট প্রায় ৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছিল তাদের বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করার জন্য।
কিন্তু লোভনীয় সেই প্রস্তাব তামিম সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। সাফ জানিয়ে দেন নিজের অপারগতার কথা। সাকিব যেমন বর্তমানে বিসিবির বাইন্ডিংসের উর্দ্ধে, তামিমের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমনই। বরং তামিম চাইলেই কোনো সমস্যা ছাড়াই চুক্তি করতে পারতেন, কেননা তিনি অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। কিন্তু তারপরও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বিশাল সেই প্রস্তাব।
একই ঘটনা ঘটেছিল আশরাফুলের সাথেও। এক দেড় মাস আগে আসে সেই প্রস্তাব। আশরাফুলকে বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে অফার করা হয়েছিল ১ লাখেরও বেশি ডলার।
আশরাফুল ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন বহু আগেই। যে কারণে তার কোনো বাধাই ছিল না বেটিং সাইটের সঙ্গে চুক্তি করতে। কিন্তু তিনিও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেই প্রস্তাব।
আশরাফুল-তামিম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও একই প্রস্তাবে সাড়া দেন সাকিব আল হাসান। সম্প্রতি সেই বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন নিজের ফেসবুক পেইজে শেয়ারও করেছেন তিনি। দুই অবসর নেওয়া ক্রিকেটার যেখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাকচ করে দিয়েছিলেন লোভনীয় এক প্রস্তাব, সেখানে সকল ফরম্যাট থেকে অবসর না নেয়া সাকিব নির্দ্বিধায় লুফে নিয়েছেন সেটি।
বিজ্ঞাপনের জন্য ঠিক কি পরিমাণ অর্থে সাকিব চুক্তি করেছেন বেটিং সাইটটির সাথে সেটি ঠিক জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে পাচ বা ছয় লাখ ডলারের বিনিময়ে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বাহাতি এই ক্রিকেটার।
এখন আপনি বলতেই পারেন রাজনৈতিক কারণে সাকিবের দেশে আশা, জাতীয় দলের হয়ে খেলা সবটাই অনিশ্চিত। বাংলাদেশের আইনে জুয়ার সাথে সকল প্রকারের সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এবং সেটি একই সাথে শাস্তিযোগ্য অপরাধও। যেহেতু সাকিবের দেশে আসাটা, জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা পুরোপুরি অনিশ্চিত, সে কারণে সাকিব বেটিং সাইটের সঙ্গে চুক্তি করতেই পারেন। কিন্তু এখানেই রয়েছে বড় একটি বাধা।
আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিব কেবল দুই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। চলতি বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তিনি না থাকলেও তিনি এখনও কাগজে কলমে জাতীয় দলের ক্রিকেটার৷ বিসিবির কোড অব কনডাক্ট অনুযায়ী এটি সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত কাজ। আর সেই নিয়ম বহির্ভূত কাজটাই সদর্পে করেছেন বাহাতি এই অলরাউন্ডার।
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি সাকিবের টান নতুন কিছু নয়। নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূত কাজ করাটাই যেন তার অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু দেশের ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ করে নতুন ও উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য এটি যে বাজে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো, সেটি বলার অপেক্ষাই রাখছে না।
আপনার মতামত লিখুন :