প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024 ইং || প্রকাশের তারিখঃ ২২ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ইং
সুকমল চন্দ্র বর্মন
কালাই (জয়পুরহাট)।
কালাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় বেপরোয়া স্কুল শিক্ষক
জয়পুরহাটের কালাইয়ের আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলমের বিরুদ্ধে কিডনির দালালি, স্কুলে না গিয়ে দোকানে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা, ভাড়া না দিয়ে জোরপূর্বক উপজেলার সরকারি কর্মকর্তার বাসভবনে বসবাসসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলনের ছত্রছায়ায় এই শিক্ষক দিনের পর দিন প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেছেন, করেছেন নানা অপকর্ম। এখনো নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন।
এছাড়াও ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বকেয়া রেখে বছরের পর বছর উপজেলার কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাসভবনে জোরপূর্বক বসবাস করছেন। তার এসব কর্মকান্ডের জন্য ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকার সচেতন মহলে মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, কালাই পৌরসভার আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম। তিনি আওড়া মহল্লার আব্দুল মজিদের ছেলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলনের দুর সম্পর্কের চাচা-ভাতিজা পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয়ের সুবাদে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন এই শিক্ষক। বিদ্যালয়ে না গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
এ ছাড়াও তিনি আওয়ামীলীগ শাসন আমলে প্রভাব খাটিয়ে ৪শ মিটার দুরে তার নিজস্ব বাসা হওয়া শর্তেও ভাড়া দিয়ে উপজেলা পরিষদের সরকারি আবাসিক ভবন জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। ওই সরকারি বাসভবনে স্বপরিবারে অবৈধভাবে বছরের পর বছর বসবাস করলেও ভাড়া দেন না তিনি। এ থেকে প্রতি বছর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান সরকারি আবাসিক ভবনের ভাড়া প্রসঙ্গে তার কাছে মৌখিকভাবে তাগাদা দেন। কিন্তু তাতেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে এমাসেই ইউএনও স্বাক্ষরিত ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বকেয়া বাসা ভাড়া বাবদ একটি নোটিশও তাকে দেওয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারি ওই ভবনের বকেয়া বাসা ভাড়া তিনি পরিশোধ করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন সহকারী শিক্ষক জানান, স্কুলের সভাপতি সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তার দূর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেছেন। করেছেন নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, কামিয়েছেন কোটি টাকা। এমনকি থানার একজন অসুস্থ কর্মকর্তার কিডনি সংগ্রহ করে দিয়ে তিনি কিডনি দালাল বনে যান। তার কিডনি দালালির বিষয়টি এক সময় মামলা পর্যায়ে গেলে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলনের হস্তক্ষেপে তিনি পার পেয়ে যান।
আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না, রুহী, জিহাদ, রাকিবুলসহ আরো অনেকে জানান, সহকারি প্রধান শিক্ষক তাদের কোন ক্লাস পায়না, স্কুলেও আসে না।
আওড়া মহল্লার বাসিন্দা জয় ও শামিম বলেন, বছরের পর বছর থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম স্কুলে আসেনা। এতে শিক্ষাথীদের পড়াশোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্কুলে না এসে দোকানে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কীভাবে।
আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহারুল আলম জানান, দোকানে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এটা মিথ্যা কথা। তার সার্টিফিকেট সমস্যা থাকার কারণে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাননি। তবে বেতনের টাকা পাওয়ার সাথে সাথে তিনিও নিয়মিত ক্লাস করবেন। বছরের পর বছর ভাড়া না দিয়ে সরকারি বাসভবনে জোরপূর্বক বসবাসের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে আওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলম মোস্তফা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক শাহারুল আলম মাঝে মধ্যে স্কুলে উপস্থিত হন। তখন তিনি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান জানান, এ বিষয়ে ইতোপূর্ব কেউ তাকে জানাননি বা অভিযোগও দেননি। তাই সেটা তার জানার বাইরে। এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার কোন নিয়ম নেই। অভিযোগ সত্য হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান , তিনি রাজশাহীতে একটি জরুরী মিটিংয়ে আছেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।