প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024 ইং || প্রকাশের তারিখঃ ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ইং
কালাইয়ে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে খাবারের হোটেল দখলের অভিযোগ।
সুকমল চন্দ্র বর্মন
কালাই, জয়পুরহাট।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারের পশ্চিম পাশে প্রভাব খাটিয়ে ভুক্তভোগী একজন খাবারের হোটেল ব্যবসায়ীর দোকানঘর ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের বিরুদ্ধে। কালাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহীম হোসেনের ছত্রছায়ায় জাহিদুল ইসলাম জাহিদ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে এ দুঃসাহস দেখিয়েছেন বলেও আভযোগ ভুক্তভোগীর। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীর মো. রেজাউল করিম তালুকদার নাজু ইতোমধ্যে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক দুটি লিখিত আবেদনও হয়েছে।
সরেজমিন এবং লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দু-যুগেরও বেশী সময় ধরে কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারের পশ্চিম পাশে শান্তিপূর্ণভাবে খাবারের হোটেল ব্যবসা করে আসছেন মো. রেজাউল করিম তালুকদার নাজু। এই মধ্যে গত আগস্ট মাসে দেশের রাজৈিনতক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিযুক্ত মো. রেজাউল করিম তালুকদার নাজু সদলবলে ওই হোটেলে প্রবেশ করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হোটেল ব্যবসায়ী মো. রেজাউল করিম তালুকদার নাজুকে জোর পূর্বক হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ওই হোটেলে তালা ঝুলিয়ে দেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এরপর তাঁকে গলা ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। একই সময়ে হুমকিসহ ভয়ভীতি দিয়ে বলা হয়-ভবিষ্যতে ফের ওই দোকানে এলে তাঁকে হত্যা করা হবে। এরপর তাঁরা ওই দোকানটিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে রূপ দেন। তারপর দোকানের সামনে টাঙিয়ে দেন দলীয় সাইনবোর্ড। এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাত্রাই ইউনিয়নে শুর হয় দখল, চাঁদাবাজি, অপরাধমূলক কর্মকান্ড ও সহিংসতায়। স্থানীয় বিএনপির নেতাদের মতে, দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই। ছিলেন না কোনো কর্মসূচিতে। আন্দোলন-সংগ্রামেও দেখা যায়নি বিগত দিনে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারাই এখন বিএনপির ‘নেতাকর্মী’ সেজে গেছেন। দাপট দেখাতে শুরু করেছেন তাদের নিজ নিজ এলাকায়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন দখল, চাঁদাবাজি, দখল আর অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে হাইব্রিড নেতারা ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হোটেল ব্যবসায়ী রেজাউল করিম তালুকদার নাজু বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পরি। কারণ ,ওই দোকানের উপার্জনে আমার সংসার চলে। আর ওই দিন থেকে সেই দোকঘরে আমার রেফ্রিজারেটর, চেয়ার, টেবিল, ফেনসহ প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও আসবাবপত্র আটকে আছে। এ ঘটনার প্রভাবে আমি মারাত্মক অসুস্থ হই। চিকিৎসা নেই বগুড়া টিএমএসএস হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে ইউএনও এবং ওসি বরারবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি সুবিচার পাব।
হোটেল ঘর দখলের বিষয় স্বীকার করে মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, বিএনপির সরকারের শাসন আমলে ওই দোকানের স্থানে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ছিল। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগ নেতা আ.ন.ম শওকত হাবিব তালুকদার আমাদের কার্যালয়টি ভেঙ্গে দেয়। তারপর সেখানে নতুন ভাবে ঘর নির্মাণ করে রেজাউল করিম তালুকদার নাজুকে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে, উপজেলা এবং জেলার উর্দ্ধতন নেতাদের নির্দেশে আমরা ওই ঘরটি দখলে নিয়েছি।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, বিএনপির সরকারের শাসনআমলে ওই দোকানের স্থানে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেটি মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ অন্যরা দখলে নিয়েছে বলে জানি। তবে এ কাজে আমি কোন নির্দেশ দেইনি। তবে সেটিকে দলীয় কার্যালয় করার কথা নয়। এ ধরণের কোন নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনাটি আমি কালাই থানায় যোগদানের আগের। তারপরও বিষয়টি আমলে নিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন, এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সাথে সাথে বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
© দৈনিক বেলা বার্তা