প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 22, 2024 ইং || প্রকাশের তারিখঃ ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ইং
সেন্ট মার্টিনে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা আইসিউতে পর্যটন খাত
নুরুল ইসলাম কক্সবাজার
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কক্সবাজারজেলার অন্যতম পর্যটন খাত সেন্টমার্টিন। সম্প্রতি বহুল আলোচিত এই পর্যটন খাতকে নিয়ে নানা আলোচনা হয়। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকার এই সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ ও পার্বত্য অঞ্চলে আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে পর্যটন খাতের শীর্ষ সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, সেন্টমার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সেখানকার উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ও পর্যটনশিল্প ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল প্রবাল দ্বীপের ১০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টোয়াব নেতারা এসব কথা বলেন। তারা সেন্টমার্টিনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কঠোরভাবে বন্ধ করে দ্বীপে রাত্রিযাপনসহ পর্যটন চালু রাখার পাশাপাশি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিকল্প পথ তৈরি, ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড লাইসেন্স, নবায়ন ফি, ব্যাংক স্থিতি ও জামানত রাখার বিধান বাতিল, ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, বছরজুড়ে সুন্দরবনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল চালু ও তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে টোয়াব সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে। নতুন করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সরকারকে বলছি, আপনাদের কতিপয় সিদ্ধান্ত পর্যটন খাতকে ত্বরান্বিত করবে না। বিনিয়োগও আসবে না। তিনি বলেন, আমাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন ও পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে কোনো পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং রাত্রিযাপন করতে পারবেন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিনে সরকার পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রাখবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সরকারের এ সিদ্ধান্তে পর্যটন শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ উদ্যোক্তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে। টোয়াব সভাপতি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। তারা সবাই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। সেন্টমার্টিনে পর্যটন বন্ধ হলে তারা সবাই বেকার হয়ে যাবে। উদ্যোক্তাদের আর্থিক বিনিয়োগও ঝুঁকির মুখে পড়বে। 'পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণেও পর্যটন খাত এবং উদ্যোক্তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্যুর অপারেটরদের নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন গেজেটে কিছু নিয়ম ও শর্ত দেওয়া হয়েছে, যা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। গেজেটে উল্লেখিত বিধিনিষেধ ও নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে'- বলেন তিনি। টোয়াব সভাপতি বলেন, ট্যুর অপারেটর নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন বিধিমালায় কিছু নিয়ম ও শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন। এতে দেখা যায়, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড নিবন্ধন ও পরিচালনার লাইসেন্স আবেদনে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। এছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যাংক স্থিতি ও তিন লাখ টাকা জামানতের বাধ্যবাধকতা আছে। এটি বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এগিয়ে নিতে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। ট্যুর অপারেটর সেবায় ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করার ভ্রমণ ব্যয় বাড়ছে। এতে গোটা পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টোয়াবের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, দ্বীপের পরিবেশ বাঁচাতে মানুষের জীবন ধ্বংস করা গ্রহণযোগ্য নয়। আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব। দ্বীপে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। জেনারেটর বন্ধ করতে সৌরবিদ্যুতে জোর দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে টেকসই পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। সেন্টমার্টিনে সাগরের পানি থেকে মিঠা পানিতে পরিণত করার নিমিত্তে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, পচনশীল বর্জ্য ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বায়োগ্যাসে পরিণত করার ব্যবস্থা গ্রহণ, ইট-বালু- সিমেন্ট-রড ব্যবহার করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট, ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সেন্টমার্টিন দোকান মালিক সমিতি, বোট মালিক সমবায় সমিতি ও মৎস্যজীবী মালিক সমিতির
নেতারা কথা বলেন
© দৈনিক বেলা বার্তা