প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 23, 2024 ইং || প্রকাশের তারিখঃ ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ইং
* সাড়ে ৩ লাখ টাকায় জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার রোহিঙ্গা ইলিয়াছের
* তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে পাসপোর্টের কাগজপত্রও
নুরুল ইসলাম, কক্সবাজার
চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশনে থেকে টাকার বিনিময়ে জন্মসনদ নিচ্ছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা। জড়িত রোহিঙ্গা দালাল ও স্থনীয় কাউন্সিলর, সচিবসহ একটি চক্র। সেই সনদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে আরও যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন , তাও তৈরি করে দিচ্ছেন তারা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি শিখে এ দেশীয় জনস্রোতে মিশতেও সহায়তা করছে তারা।
জানা যায়, চট্রগ্রাম আলকরন ৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রেজিস্ট্রার আব্দু সালাম, সহকারী রেজিস্ট্রার শাহিন, দালাল কক্সবাজারের শামসু দীর্ঘদিন ধরে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে রেজিস্ট্রার আব্দু সালামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সহকারী রেজিস্ট্রার শাহিন, চট্রগ্রামে রোহিঙ্গা জন্ম সনদ পাওয়ার কোন সূযোগ নেই। তার বাবা মার জন্ম নিবন্ধন ও এন আইডির ভিত্তিতে করা হয়েছে। সে মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি হাই স্কুলের ছাড়পত্র, ফটিকছড়ি, ভূজপুর ইউনিয়নের হরিনা এলাকার সৈয়দ হোসেনের পুত্র রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ ও পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। যার এন আইডি নং ৬৯২৮৮৬৬৫০৫ জন্ম নিবন্ধন নং ২০০৩১৫৯১৬৩১১১৪৭০৯।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গারা তাদের স্বজনদের বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা লগ্নি করছে। । অতিরিক্ত টাকার লোভে দালান, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ তৈরি করে দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সে চট্রগ্রাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক নূর নাহার বেগম সাক্ষরিত ছাড়পত্র জালিয়াতি করে ৫ম শ্রেণির ছাড়পত্র ব্যবস্থা করে । তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমি ২০২১ সালে অত্র বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করি এটা জালিয়াতি করে করা হয়েছে। সনদের সাক্ষরটি আমার না। আমার সাক্ষরের সাথে এই সাক্ষরের কোন মিল নেই।
অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জুলফিকার বলেন, এটা জালিয়াতি করে করা হয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ইস্যুকৃত সনদটি ভূয়া। ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণ করে ২০০৮ সালে ৫ শ্রেনি কোনভাবে সম্ভব নয়। বিষয়টি আমি বিদ্যালয় মিটিংয়ে উত্থাপন করব।
এ ব্যাপারে চট্রগ্রাম বিভাগীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুস আলী বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ইলিয়াছ কক্সবাজার টেকনাফ কুতুপালং ক্যাম্প ৫নং ব্লকের কবির আহমেদ এর পুত্র। সে কক্সবাজার বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন। সে টেকনাফ উপজেলা, হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার স্থানীয় বাসিন্ধা ও বর্তমান কক্সবাজার পৌরসভায় তারাবনিয়ার ছড়া এলাকার ভোটার হামিদ হোসেনের এন আইডি ও জন্ম সনদের মাধ্যমে হামিদের পুত্র পরিচয়ে কক্সবাজার পৌরসভায় জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন । কক্সবাজার পৌরসভায় ব্যার্থ হয়ে পরে কক্সবাজার খরুলিয়া এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা শামসুর মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্রগ্রামের ফটিকছড়ির , হরিনা ভূজপূরের মোহাম্মদ ইউনুছের ( এন আইডি নং ৫৫২৮৪২৮৪৪৩) পুত্র পরিচয় দিয়ে জন্ম নিবন্ধন ও এন আইডি কার্ড সংগ্রহ করেন।
রোহিঙ্গা ইলিয়াছের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে টাকার বিনিময়ে বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য শামশুর মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন ও এন আইডি করেন এবং পাসপোর্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইলিয়াছ আরও জানান, তার বড় ভাই কক্সবাজারের খরুলিয়া এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা শামসুর মাধ্যমে সে তার জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি নং পাসপোর্ট করান। তার ভাই বিদেশ থেকে দালাল শামসুর সাথে যোগাযোগ করেন এবং রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করে দেন৷
তার বাবা কবির আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে একজন দালালের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কক্সবাজারে করতে না পেরে দলালের মাধ্যমে চট্রগ্রাম থেকে কাজ করছি। ঢাকা থেকে পাসপোর্ট করতেছি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামিউল হাকিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করব।