প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 22, 2024 ইং || প্রকাশের তারিখঃ ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ইং
আমতলীতে নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ
আমতলীতে নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার নাটক।
মোঃ শাহজালাল, বরগুনাঃ
স্বামী ইমন সরদারের নির্যাতনে স্ত্রী জুবায়রা আক্তার জান্নাতি (১৭) নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাবা সাংবাদিক সুমন রশিদ এমন অভিযোগ করেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, মেয়েকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে নাটক করছে। ঘাতক স্বামী ইমন সরদার স্ত্রীর লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী পৌরসভার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় শুক্রবার রাতে।
জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের আমতলী সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি সুমন রশিদের কন্যা জুবায়রা আক্তার জান্নাতিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত এক বছর আগে গোপনে বিয়ে করেন নাচনাপাড়া গ্রামের আল আমিন সরদারের ছেলে ইমন সরদার। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী জান্নাতিকে যৌতুক সহ নানা অযুহাতে নির্যাতন করে আসছে স্বামী ইমন সরদার এমন অভিযোগ বাবা সুমন রশিদের। শুক্রবার বিকেলে দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী জান্নাতিকে স্বামী ইমন মাথার চুল কেটে দেয়। এ নিয়ে স্বামী—স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এক পর্যায় স্বামী ইমন সরদার স্ত্রী জান্নাতি কে বেধড়ক মারধর করে। ওই মারধরে তিনি মারা যায়। মৃত্যু ভেবে স্বামী ইমন স্ত্রীর গলায় ওড়না পেরিয়ে ফাঁস দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে স্বামী ইমন স্ত্রীর মরদেহ আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসক জান্নাতির মৃত্যু নিশ্চিত করলে লাশ রেখে ইমন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় আমতলী থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। স্বামী ইমন সরদার আমতলী পৌরসভা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। শনিবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ জান্নাতির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওইদিন বিকেলে বাবার পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, স্বামী ইমন স্ত্রী জান্নাতিকে প্রায়ই নানা অযুহাতে মারধর করতো। শুক্রবার বিকেলে ইমন স্ত্রী জান্নাতির মাথার চুল কেটে দেয়। এর প্রতিবাদ করে জান্নাতি। এক পর্যায়ে স্বামী ইমন স্ত্রী জান্নাতি কে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মৃত্যু ভেবে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে ডাকাডাকি করে। পরে নিজেই স্ত্রীর মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বাবা সুমন রশিদ বলেন, আমার মেয়ে জান্নাতিকে বিয়ের পর থেকেই জামাতা ইমন সরদার প্রায়ই নির্যাতন করতো। আমাকে মেয়ে বেশ কয়েকবার ফোনে জানিয়ে। কিন্তু আমি মেয়ের কথা আমলে নিইনি। শুক্রবার বিকেলে আমার মেয়ের মাথার চুল কেটে দেয় ইমন। আমার মেয়ে এর প্রতিবাদ করলে শ্বশুর—শ্বাশুড়ীর নির্দেশে স্বামী ইমন বেধরক মারধর করে। এতে আমার মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মৃত্যু ভেবে আমার মেয়ের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
স্বামী ইমন সরদার স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, দাম্পত্য কলহের জের ধরে আমি আমার স্ত্রীর মাথার চুল কেটে দিয়েছি। এ ঘটনায় আমার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। এক পর্যায় গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, হাসপাতালে আনার পূর্বেই জান্নাতির মৃত্যু হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মোঃ শাহজালাল
বরগুনা
© দৈনিক বেলা বার্তা